On This Page

কারুকলা

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - চারু ও কারুকলা - NCTB BOOK

পাঠ : ১

বাঁশ ও বেতের কাজ

বাঁশ আমরা সবাই দেখেছি। আমাদের দেশে নানা প্রকার বাঁশ পাওয়া যায়। যেমন-বরাক, মাথাল, জাই, মুলি, চিকন প্রভৃতি। দেশের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় একই বাঁশ হয়তো ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- বরাক সিলেটে বরুয়া এবং নোয়াখালীতে বরো নামেও পরিচিত। মাখাল বাঁশকে কোথাও বাকাল আবার মুলিকে কোথাও বা বেতো বাঁশ বলা হয়।

বেত আমাদের কাছে পরিচিত। মোটা ও সরু, সাধারণত দুই ধরনের বেত সচরাচর আমরা দেখে থাকি। মোটা লম্বা বেত, গোল্লা বেত এবং চিকন বেত জালি বেত নামে পরিচিত। এই বাঁশ ও বেত দিয়ে ঘর-দরজা, চেয়ার-টেবিল, আলনা, দোলনা, ডালা, কুলো, খেলনা এবং আরো কত সুন্দর জিনিস যে তৈরি করা যায় তা বলে শেষ করা যায় না।

কিন্তু সব বাঁশ দিয়ে সব কাজ হয় না। সব বেত দিয়েও না। যে কাজের জন্য যে বাঁশ সবচেয়ে বেশি উপযোগী সে কাজে সে বাঁশই ব্যবহার করতে হয়। বেতের বেলায়ও তাই কাঠামোর জন্য ব্যবহার করতে হয় গেল্লা বেত আর বাধন নকশা ও বুনন এর জন্য জালি বেত। এ হলো সাধারণ নিয়ম। ভাই কোনো জিনিস তৈরি করতে গেলে ঐ কাজের উপযোগী প্রয়োজনীয় বাশ-বেত সংগ্রহ করে নেব। কিন্তু সব সময়ই তো আর ইচ্ছেমতো সব জিনিস পাওয়া যায় না। হাতের কাছে যখন যে জিনিস পাব তা দিয়েই সবচাইতে কম খাটুনিতে সব চেয়ে সুন্দর কী জিনিস তৈরি করা যায় তা চিন্তা করব। একখন্ড বাশ পেলে সেটা ভালো করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখব ও চিন্তা করব এ দিয়ে কী তৈরি করা যায়। ফুলদানি, ট্রে, ডালা, কুলো, ঝুড়ি, নৌকা, পুতুল, বাঁশি না অন্য কোনো কিছু?

উপকরণ কোনো জিনিস তৈরি করতে গেলে বাঁশ, বেত ছাড়াও যন্ত্রপাতি ও আরো কিছু জিনিসপত্রের প্রয়োজন হয়। যেমন- ধারালো দা, ছুরি, করাত, হাতুড়ি, বাটাল, তুরপুন, শিরীষ কাগজ ভাঙা কাচের টুকরা, ছোট বড় তারকাটা এবং বাঁশ বেত ও কাঠ জোড়া দেওয়ার উপযোগী শক্ত আঠা ইত্যাদি। যারা আমরা শহরে বাস করি সহজেই পেলিগাম, আইকা, অ্যাক্রেলিক এসব উন্নতমানের বিদেশে তৈরি আঠা সংগ্রহ করে নিতে পারি। কিন্তু মফস্বলের ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। তাই সহজলভ্য ও বেশ শক্ত আঠা তৈরির একটি পদ্ধতি এখানে জেনে নিই।

ময়দার সাথে পানি মিশিয়ে রুটি তৈরির উপযোগী একটি পিন্ড বা গোলা তৈরি করি। এক টুকরা পাতলা কাপড়ে ঐ পিণ্ডটি ভালো করে বেঁধে নিয়ে গামলায় পানিতে, হাতের মুঠোয় চেপে চেপে ধুতে থাকি। গামলার পানি মাঝে মাঝে বদলাব এবং যতক্ষণ ঐ পিণ্ড থেকে ময়দা ধোয়ার সাদা পানি বের হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ধোবো। ধোয়া শেষ হলে দেখব কাপড়ের বাঁধনে ছানার মতো নরম কিছু জিনিস জমে আছে। একটি পাত্রে তা যত্ন করে তুলে রাখি। এর সাথে সামান্য কিছু পান খাওয়ার চুন খুব ভালো করে মেশালেই খুব ভালো আঠা তৈরি হবে। চুন মেশানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই আঠা ব্যবহার করতে হবে তা না হলে শক্ত হয়ে যাবে। চুন না মেশালে ছানার মতো অবস্থায় এই আঠা দুদিন পর্যন্ত রাখা যায়। বাঁশ ও বেত দিয়ে কেমন করে কী জিনিস তৈরি করা যায় এবার জেনে নিই।

পাঠ : ২,৩

ফুলদানি

বাঁশ দিয়ে খুব সহজে ফুলদানি তৈরি করা যায়। ফুলদানির জন্য মোটা ফাঁপা বরাক বাঁশের প্রয়োজন। বাঁশ যেন পাকা শুকনো হয়। লক্ষ রাখব বাঁশের গায়ে যেন কোনো ফাটল না থাকে, পোকায় কাটা না হয়। বাঁশের গিটগুলো ধারালো দা দিয়ে চেঁছে সমান করে নেব যেন হাতে না লাগে। করাত দিয়ে খুব সাবধানে গিটের এক বা দেড় ইঞ্চি নিচে কেটে নেব। লক্ষ রাখব যেন গিঁট কেটে ছিদ্র না হয়ে যায়। বাঁশ যেমন মোটা তার সাথে মিল রেখে কুলদানির উচ্চতা ঠিক করতে হবে। বাঁশের ব্যাস মেপে নিয়ে তার বিগুণ উচ্চতা রাখলে মানানসই হয়। ভালো লাগলে এর চেয়ে লম্বা করেও কাটতে পারি। উচ্চতা ঠিক করে খুব সাবধানে করাত দিয়ে কেটে নিই। খেয়াল রাখব কাটার সময় যেন কেটে না যায়। এই তো মোটামুটিভাবে একটা ফুলদানি তৈরি হলো। শিরীষ কাগজ দিয়ে ঘষে ফুলদানির মুখ ও তলা মসৃণ করে নিই। এবার এটাকে কত বেশি সুন্দর করা যায় তা ভেবে চিহ্নিত করতে হবে। বাঁশের উপরের মসৃণ অংশ চেঁছে তুলে নিলে ভেতর থেকে লম্বালম্বি আশের সুন্দর স্তর বের হয়। স্বাভাবিক মসৃণ অংশ ও চাঁহা অংশের মধ্যে রঙেরও তারতম্য হয়। এই তারতম্যকে ফুলদানির গায়ে নকশা করার কাজে লাগানো যায়। চাঁছা অংশ অবশ্যই শিরীষ কাগজ দিয়ে ঘষে মসৃণ করে নেব। এভাবে পছন্দমতো নকশা করার পর ফুলদানির ভিতরে ও বাইরে কোপাল ভার্নিশের চকচকে প্রলেপ দিয়ে নেব। অন্যান্য পদ্ধতিতেও নকশা করা যায়। বাঁশের বাতাবিক মসৃণ পিঠ সম্পূর্ণরূপে চেঁছে তুলে ফেলে শিরীষ কাগজে ঘষে পলিশ করে নিয়ে এনামেল বা অন্য কোনো রং দিয়ে পছন্দমতো নকশা করব। ঐ রং শুকিয়ে যাওয়ার পর ফুলদানির ভিতরে ও বাইরে কোপাল ভার্নিশের প্রলেপ দিয়ে নেব। তার্নিশে জিনিসটি যেমন চকচকে হয় তেমনি পোকায় কাটারও তর থাকে না।

উপরে দেয়া একই নিয়মে পেনসিল ও কলম রাখার পান্না, ছাইদানি, গ্লাস ইত্যাদি তৈরি করা যেতে পারে। ছাইদানির উচ্চতা পরিমাণমতো কমিয়ে নেব, গ্লাসের মুখ ভেতর থেকে চেঁছে পাতলা করতে হবে আর নিচের দিকটা চেঁছে সরু করে নিলে সুন্দর দেখাবে। পেনসিল ও কলম রাখার পাত্র এবং গ্লাসের জন্য অপেক্ষাকৃত সরু পাতলা বাঁশ ব্যবহার করব। মুলি বা বেতো বাঁশের গোড়ার দিকটা এ কাজের জন্য উপযোগী। ছাইদানির জন্য মোটা ও পুরু বাঁশের প্রয়োজন। নিচের ছবিতে ফুলদানি, পেনসিল ও কলম রাখার পাত্র, গ্লাস ছাইদানি প্রভৃতির কিছু নমুনা আছে। এমনি করে বাঁশ কেটে ও ছেটে আরো বিভিন্ন নকশায় ফেলে বিভিন্ন গড়ন ও গঠনের জিনিস তৈরি করতে পারি।উপরে আলোচিত জিনিসগুলো তৈরি করতে বাঁশ চেরা অথবা ছিলার প্রয়োজন হয় না। শুধু কেটে নিলেই হলো। এবার যে সব জিনিসের কথা জানব, সেগুলো তৈরি করতে হলে বাঁশ চেরা ও হিলার প্রয়োজন হবে। তাই আগেই এ সম্পর্কে কিছু জেনে নিই। বাঁশকে চিরে ও ছিলে ব্যবহারের উপযোগী ও আকৃতির প্রকারভেদে মোটামুটিভাবে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- চটা, শলা, বেতি ও পাতি।পাঠ ৪,৫৩৬

চষ্টা : বাঁশের লম্বালম্বিভাবে চিরে চেঁছে কিছুটা মসৃণ করে নিলেই বাশের চটা তৈরি হয়। পলা সাধারণত দেখতে গোল এবং সম্যা । প্রয়োজনবোধে শশা খুবই সত্ করা যায়। প্রয়োজনমতো লম্বা-লখি করা যায়, তবে দুই তিন হাতের বেশি নয়। শলা তৈরির জন্য মাখাল বা বাকাল বাঁশের প্রয়োজন। বাস্কেট, মাছ ধরার সরঞ্জাম, সোলনা প্রভৃতি বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতে শলা ব্যবহার করা হয়।

যেপ্তি : মুলি বা বেতো বাঁশ দিয়ে বেতি তৈরি করতে হয়। প্রথমত চটা তৈরি করে বুকের নিকটা ভালো করে চেঁছে ফেলে নিয়ে বেত সরু করে চিরে ও ছিলে কিছুটা মসৃন করে নিতে হয়। বেদ্ধি সাধারণত চারকোণ বিশিষ্ট, চওড়া ও সা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেতি পুরুর চেয়ে চওড়া কিছুটা বেশি হয়। টুকরি, খালই, মাছ ধরার সরঞ্জাম প্রভৃতি তৈরি করতে বেভির প্রয়োজন।

গাভি : পাতি তৈরির জন্য মুলি বা বেতো বাঁশের একান্ত প্রয়োজন। বাঁশের পিঠ ও বুকের মাঝামাঝি অংশটুকু খুব সাবধানে শরতের পর পরত ছিলে নিয়ে পাতি তৈরি করতে হয়। কাঁচা বাঁশ থেকে পাতি ছিলা সহজ, তবে কোনো কিছু বোনার মাগে ঐ পাতি ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। শুকনো বাঁশ দিয়ে পাতি তৈরি করা খুবই কঠিন। পাতি ছিলার আগে শুকনো ধাপ দুই তিন দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখব। পাতির আকৃতি চ্যাপ্টা এবং পাতলা, এক সুতা থেকে ইঞ্চি খানেক চওড়া এবং প্রয়োজন অনুযায়ী লম্বা। সুখ ও খুব পাতলা গাতি এক হাত দেড় হাতের বেশি লম্বা রাখা যায় না। কুলো, ডালা, চালনি, পাখা ও অন্যান্য জিনিস বুনন এর কাছে পাতি ব্যবহার হয়।

বাঁশের চটা নিয়ে আমরা নানাপ্রকার প্রয়োজনীয় ও সুন্দর জিনিস তৈরি করতে পারি। যেমন- কাগজ কাটার ছুরি,

খাওয়ার টেবিলের ছুরি, চামচ, কাটা ইত্যাদি। বাশের চটা দিয়ে নৌকাও তৈরি করতে পারি।এ দুটি জিনিস তৈরি করার একই নিরম। এগুলোর আকৃতিতে শুধু সামান্য ব্যবধান। ইঞ্চি খানেক চওড়া ও আট/নয় ইঞ্চি দ্যা পাকা বাঁশের চটা দিই। বুকের দিকের নরম অংশটা ফেলে দিয়ে চেঁছে প্রয়োজনমতো পাতলা করি। পিঠেপিকটাও সামান্য চেঁছে নিই যাতে বাঁশের আঁশ লেখা যায়। ছুটির বাটের নিকটা যেন অপেক্ষাকৃত পুরু থাকে। খুব সাবধানে নিরে দিরে ছবির আকৃতির অনুকরণে কাটি। কাগজ কাটা ছুটির দুদিক এবং খাবার টেবিলের ছুরির আরেক নিক ধারালো করে নিই। এবার ভাঙা কাচের টুকরা দিয়ে একটু চেঁছে খুব মিহি শিরীষ কাগজ দিয়ে ঘরে খুব মসৃণ করি এবং কোপাল ভার্নিশের প্রদেশ নেই।

বাশ দিয়ে সুন্দর সুন্দর পুতুলও তৈরি করা যায়। পুরুদের জন্য এক ইঞ্চি থেকে আড়াই ইঞ্চি ব্যাসের পুর বাপের প্রয়োজন। ভিতরের মিত্র যেন খুব ছোট হয়। চিকন বাঁশের গোড়ার দিকটাই উপযোগী। বাশের ব্যাস যত বেশি হবেপুরুষের উচ্চতা অত বাড়বে। নিচের ছবিতে দুই ধরনের পুতুল তৈরির বিভিন্ন স্তর পর পর দেখে নিই। ছবি দেখি এবং সে অনুযায়ী পুতুল দুটি তৈরি করি। মাথার চুলের জন্য খুব মসৃণ ও পাতলা করে বাঁশের পাতি ছিলে নিই। পাতিগুলোর মাথা পেনসিল অথবা আরো সন্তু কোনো কিছুতে পেঁচিয়ে পাতি ছিলে নিই। পাতিগুলোর মাথা পেনসিল অথবা আরো সন্তু কোনো কিছুতে পেঁচিয়ে আগুনের আঁচ দিলেই সব সময় বাঁকা থাকবে। পুরুষের হাতগুলো বাঁশের কাঠি দিয়ে তৈরি করি। পুহুদের চুল ও বাত মাঠা দিয়ে লাগাব। চুল লাগানোর আগেই মিহি শিৱৰ কাগজে যবে পুলটি মসৃণ করে নিই। লাগানোর পর কার্নিশের প্রদেশ দেব। ভার্নিশ পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে এনামেল রং দিয়ে হালকা করে চোখ, মুখ আঁকৰ, নাকের চিহ্ন নেব এবং কাপড়-চোপড় কুঝাবার জন্য ছবি আঁকা, নকশা করব ও মাথার চুলগুলো কালো করে দেব।নানা রকম শখের জিনিস আমার জীবনে বাঁশ বেতের জিনিসের ব্যবহার খুবই বেশি। ভালা, ফুলো, চালনি, টুকরি, খালই, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম ছাড়া আমাদের কৃষি নির্ভর সমাজ অচল। উপরোক্ত জিনিসগুলো তৈরি করার জন্য প্রথমে বুনন শেখা প্রয়োজন। বহু ধরনের বুনন গাছে, বুনে বুনে সুন্দর সুন্দর নকশাও ভোলা যায়। সাধারণ একবাপ্পা, মুখাল্লা ও তোরা বুননের প্রচলন খুব বেশি। সমতলভাবে যেমন বোনা যায় তেমনি কুগুলি পাকিয়ে ক্রমাগত বুনে নিচ থেকে উপরে ওঠা যায়। প্রয়োজনবোধে ওপর থেকে নিচেও নামা যায়। কুগুলি পাকানো কুনায় ও একথারা, সুখারা ও ভোয়া পদ্ধতি প্রচলিত। বাতপথা কিংবা কোনো সৌখিন জিনিসের মধ্যে ফুলে নকশা তোলার জন্য রঙিন পাতি ব্যবহার করা হয় এবং নকশার প্রয়োজনে একমাত্রা, দুধারা, ভেবারা প্রভৃতি বুননের সমস্যার করা যায়। ছবিতে পর পর একবারা, সুধারা, তোরা কুগুলি পাকানো ও নকশা বুননের নমুনা দেখে নিই। এবর নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস তৈরির পদ্ধতি জেনে নিই।ভালা ও চালনি

ডালা ও চালনি তৈরির পদ্ধতি একই রকম। চানার জন্য ভাবা ইঞ্চি চওড়া এবং চালনির জন্য এক সুতা বা দেড় সুভা চওড়া পাতলা বাঁশের পাত্তি নিই। পতিগুলো হবে বিশ একুশ ইঞ্চি সবা। দুটো জিনিসই সাধারণত দুখারা প্যাতিতে বুনতে হবে। ডালা ঝুনতে হবে ঠাস বুননি নিয়ে যেন কোনো মিত্র না থাকে আর চালনি বুনৰ গাভিতে, দরকার মতো ফাঁক রেখে। খেয়াল রাখব স্যা-সবি ও জাড়ানাড়ি উত্তর দিকে পাতিতে গতিতে যেন সমান ফাঁক থাকে। বুনা শেষ হলে ঢাক বা ফ্রেম লাগাতে হবে। ঢাকের জন্য এক থেকে দেড় ইঞ্চি চওড়া, গাড়ে তিন হাত লম্বা পাতলা ঋণের চর্চা দিয়ে ভালো করে চেঁছে বুঝের দিকটা সমান করে নিই। প্রত্যেকটি ভাষা বা চালুনের জন্য এরকম একজোড়া চটার প্রয়োজন। চটাগুলোর সুমাখা হয় সাত ইঞ্চি জায়গা চেঁছে রুমে রুমে পাতলা করে দুই দিকে যথাসম্ভব পাতলা করে নিই। প্রত্যেকটি চটার এক মাধা পিঠের দিকে এবং অপর মাধা পেটের দিকে চাইতে হবে। চাছা শেষ হলে একটি চটার পিঠ বাইরের দিকে রেখে আস্তে আস্তে বাঁকিয়ে গোল করে নিই এবং এক হাত ব্যাস রেখে সরু করে চেরাগুলে বেত দিয়ে বেঁধে একটি চাক তৈরি করি। দ্বিতীয় চটার বুক বাইরের দিকে রেখে এভাবে আরো একটি চাক তৈরি করি। প্রথম চাকের চেয়ে দ্বিতীয় চাকের ব্যাস পোৱা ইঞ্চি কম হবে। ভালা অথবা চালনির বুনানো অংশটি বর্ষাসম্ভব বড় রেখে গোল করে ফাটি এবং চারদিকে সমান ধারণা রেখে বড় চাকের উপর বসিয়ে তাতে চেপে চাকের ভেতর কিছুটা নামিত্রে নিই । আবার ছোট চাকটি বড় চাকের ঠিক মাঝখানে এবং চেপে দেওয়া ঘুমানো অংশের উপর বসিয়ে জোরে চেপে চেপে বসিয়ে দিই। ছোট চাক কলাবার সময় খেয়াল রাখব এর ঘোড়া কেন বাইরের বড় চাকের জোড়ায় উল্টো দিকে গড়ে।ছোট চাক বড় চাকের ভেতর মোটামুটিভাবে বসে গেলে চাকের উপরে বেরিয়ে থাকা বুননের বাড়তি অংশ ধারালো ছুরি দিয়ে বড় চাকের সমান করে কাটি এবং চেপে চেপে চাক দুটির মুখ সমান করে নিই। ভিতরের চাকের বাঁধন কেটে দেই যাতে চাকটি প্রসারিত হয়ে বাইরের চাকের সাথে ঠেসে বসে যায়। চাক দুটির মুখের মাঝামাঝি ফাঁকের উপর বাঁশের সরু একটি বেতি বসিয়ে বুননসহ চাক দুটিকে সরু করে চেরা জালি বেত দিয়ে ক্রমান্বয়ে বেঁধে শেষ করে দেব। এবার আমরা যে কোনো মাপের ডালা, চালনি কিংবা এ ধরনের যে কোনো জিনিস তৈরি করতে পারব। গ্রামে অনেকেই খুব সুন্দর সুন্দর ডালা ও চালনি তৈরি করতে পারে। সুযোগ পেলেই আমরা তাঁদের কাজ দেখে নেব, তাহলে বিষয়টি বুঝতে আরো সহজ হবে। জিনিসগুলো ছোট আকারে তৈরি করে আমরা খেলনা বা শখের জিনিস হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।

ঝুড়ির জন্য পাতি ও বেভি দুটোই ব্যবহার করতে হয়। আগেই জেনেছি, পাতি হয় চ্যাপ্টা ও পাতলা আর বেতি হয় লম্বা সরু পাতির চেয়ে পুরু। কমপক্ষে আধা ইঞ্চি চওড়া ও হাত তিনেক লম্বা বেশ কিছু পাতি নিয়ে নিচের ছবির অনুকরণে বৃত্তের মতো করে বসাই। সবগুলো পাতির মাঝামাঝি জায়গাটা যেন কেন্দ্রে পড়ে। এবার লম্বা বেতি দিয়ে কেন্দ্রে বৃত্তের আকারে বুনে যাই। একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে- একসাথে দুটি বেতি নিয়ে বুনন আরম্ভ করতে হবে। ছবিতে লক্ষ করি প্রথম বেতি যে পাতির নিচ থেকে উপরে উঠছে দ্বিতীয় বেতি তার পাশের পাতির নিচ থেকে উপরে উঠেছে। বুনার সময় কেন্দ্র থেকে চারদিকে ছড়িয়ে যাওয়া পাতিগুলোকে প্রতিবারেই একটু একটু করে উপর দিকে টেনে দেব যেন বুনন একেবারে সমতল না হয়ে পরিধির দিকে আস্তে আস্তে উপরে উঠতে থাকে।সমতল না হয়ে আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠে শেষ পর্যায়ে খাড়া হয়ে উঠে। এবার খাড়া হয়ে যাওয়া পাখিগুলোর দুই ইঞ্চির মতো বড়তি রেখে বুনন শেষ করে নিই। পতির বাড়তি দংশ ভাঁজ করে ঝুড়ির পরিধির সাথে সমান্তরালভাবে পেঁচিয়ে বেঁধে নিই। ইঞ্চি খানেক চওড়া ও প্রয়োজনমতো লম্বা দুটি বাঁশের চটা নিয়ে চেঁছে ছিলে চাকের জন্য তৈরি করি । এখন বুকের দিকে মুখোমুখি করে বুড়ির বাইরে তেকরে বসিয়ে শক্ত করে বেঁধে নিই। এই পদ্ধতিতে আমরা ছোট ছোট খেলনা ঝুড়িও তৈরি করতে পারি, তবে তার জন্য বেতি, পাতি, চটা সব কিছুই সন্তু ও পাতলা হতে হবে যাতে খেলনা বুড়ির জাকারের সাথে খাপ খায়।

খালই তৈরির জন্য প্রায় আধা ইঞ্চি চওড়া ও দুই হাত লম্বা পাতি ও লম্বা সরু বেভিন্ন প্রয়োজন। নিচে ছমিে পাতিগুলির মাঝে পোয়া ইঞ্চি করে ফাঁক রেখে সাত এটি ইঞ্চি চওড়া করে লম্বালম্বিভাবে বসাই। ঐ একই পতি আড়াআড়িভাবে ব্যবহার করে স্যালরি গাভির মাঝখানটায় বুনে বাই। যুনানো অল নম্বা চওড়ায় সমান হয়ে গেলে এই যুসন শেব করি। এবার এক জোড়া লম্বা বেতি নিই। সুমানো অংশের এক কোথা থেকে বেভির এক প্রস্ত দিয়ে খুড়ির বুসনের মতো বাঁ দিক থেকে ডান দিকে বুনতে আরম্ভ করি। বুনন দ্বিতীয় কোণ পর্যন্ত পৌঁছে গেলে সম্পূর্ণ জিনিসটি বাঁ দিকে ঘুরিয়ে কসাই। বাঁরের অংশটি উপরের দিকে টেনে তুলে নিয়ে বেভিগুলো ঘুরিয়ে সামনের অংশ বুনে লোরে টেনে নিই। এবার বাঁ দিকের কোণে সামনের ও বীরের পতি দুটির নিচের দিকে লম্বালম্বিভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বুঝে নিই এবং প্রত্যেকটি কোণের পাতিগুলোকে পারে গারে লাগিয়ে দিই। দুই তিন লাইন টেনে কুনার পর পর টাবনা, এবার থেকে বাইরের দিকে সামানা ঠেলে ঠেলে পর পর প্রসারিত করে বুনে যাই।খেয়াল রাখব বুননের সময় খাড়া পাতিগুলোর মধ্যেকার ফাঁক যেন সমান থাকে। খাড়া পাতির মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে উঠার পর বুননের সময় বেডি একটু টেনে খালইর সুখের দিকে ক্রমশ ছোট করে বুনি। পাতি দু ইঞ্চি বাড়তি রেখে বুনন শেষ করি। পাতির বাড়তি অংশটুকু মুখের সমান্তরালভাবে ভেতরের দিকে ভাঁজ করে সরু বেত দিয়ে পেঁচিয়ে বাঁশি। খালই মোটামুটি তৈরি হলো। এবার আধ ইঞ্চি চওড়া ও একক বাশের চটা নিয়ে খানইর মুখের মাসে একটি চাক তৈরি করে উপরের দিকে বসিয়ে সুন্দর করে বেঁধে নিই।বাকি রইল হাতল। লম্বা, মাঝারি ধরনের মোটা একই মাপের দুই খণ্ড জালি বেত নিই। একই পাশ থেকে ছিলে প্রত্যেকটির দুই মাথা আধা ফালি করে নিয়ে ছবির মতো খালইতে লাগিয়ে সরু চেরা বেত দিয়ে সুন্দর করে বেঁধে নিলেই খালই তৈরি শেষ হলো। দৈনন্দিন জীবনে খালই যেমন ব্যবহার হয় তেমনি শখের জিনিস হিসেবে ছোট ছোট খালই তৈরি করে ঘরে রাখতে পারি।

পাঠ: ১০, ১১ ও ১২

মুর্তা ও বেতের কাজ

মুর্তা ও বেত আমাদের দেশে সব জায়গায় পাওয়া যায়। কোথাও কম কোথাও বেশি। সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম প্রভৃতি জেলায় মুর্ছা ও বেত প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। তাই এসব স্থানে পার্টি, মুর্তার ও বেতের তৈরি চাটাই এবং নকশা করা মাদুরও প্রচুর পরিমাণে তৈরি হয়। সিলেটের পার্টি দেশ-বিদেশে বিখ্যাত। মূর্তার ব্যবহার উপযোগী অংশটি সাধারণত পাঁচ ছয় ফুট লম্বা। এর মধ্যে কোনো গিট থাকে না। উপরিভাগ শক্ত মসৃণ,

কাঁচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ। ভেতরের অংশ সাদা ও শোলার মতো নরম। মুর্তার উপরের শক্ত ও মসৃণ অংশটুকু কাজে লাগে, নরম অংশ ফেলে দিতে হয়। পাটি, মাদুর, চাটাই কিংবা অন্যান্য যেকোনো জিনিস তৈরি করতে গেলেই মুর্তা এবং বেত ছিলে পাতি তৈরি করে নেব। ছোট-বড় বিবেচনা করে প্রথমে মুর্তা ও বেতকে লম্বালম্বি চার থেকে আট ফালি করে চিরে নেব। বুকের নরম অংশটা সাবধানে চেঁছে ফেলে দিব, যেন বুকের সাথে পিঠের শক্ত অংশ কাটা না পড়ে।

এই অবস্থায় পাতি যথেষ্ট পুরু রয়েছে এবং বুকের সাদা নরম জিনিসটি আংশিকভাবে থেকে গিয়েছে। এবার বাঁশের একটি খুঁটির সাথে পেঁচিয়ে বুকের দিক উপরে রেখে পুরু পাতিগুলোকে আগাগোড়া টেনে নিই যাতে বুকের দিকটা কেটে গিয়ে মসৃণ পিঠের দিকটা সমতল হয়ে যায়।

এভাবে পাতিগুলোর বুক ফাটানো ও পিঠ সমতল হয়ে গেলে বুকের দিকটা আবার ভালো করে চেঁছে নিই। দেখি পাতিগুলো বেশ পাতলা হয়ে গেছে। প্রয়োজনবোধে আবার লম্বালম্বিভাবে চিরে সরু করে নেব। চাটাই ও মাদুরের জন্য এই পর্যায়ের পাতি ব্যবহার করা হয় কিন্তু পাটির জন্য আরো সূক্ষ্ম পাতির প্রয়োজন। ভালো পার্টি তৈরির উপযোগী পাতি তৈরি করা শিখতে দীর্ঘদিনের অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। পাতি তৈরি করার পর দুই তিন দিন পানিতে ডুবিয়ে রেখে আবার একটু শুকিয়ে নিয়ে কাজে লাগাব। মাদুর ও পাটিতে বুনে নকশা করার জন্য রঙিন পাতি ব্যবহার করতে হয়। মুর্তার মসৃণ পিঠের দিকে রং ধরতে চায়না যে পাতিতে রং করব তা চেরার আগে মুর্তার পিঠের মসৃণ স্তরটা খুব হালকাভাবে চেঁছে নেব। পাকা রং পানিতে গুলে পাতিগুলো কয়েক ঘণ্টা ডুবিয়ে রেখে রং করব। পার্টি অথবা মাদুরের জন্য সাধারণত লালের সাথে সামান্য সবুজ মিশিয়ে মেরুন রং ব্যবহার করা হয়। মুর্তা ও বেতের পাতি তৈরি ও রং করার কথা জানলাম। এবার কয়েকটি জিনিস তৈরি করি। প্রথমে চাটাই দিয়েই আরম্ভ করি।

চাটাই

মুর্তার চাটাই শোয়া, বসা, বিছানার নিচে পাতা প্রভৃতি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। শহরবাসীদের মধ্যে এই চাটাইর ব্যবহার বেশি না থাকলেও গ্রামে-গঞ্জে, মফস্বলে এটা খুবই প্রচলিত। একটু চেষ্টা করলে আমরা চাটাই তৈরি করতে পারব।

চাটাই ছোটও হতে পারে আবার বড়ও হতে পারে। এর জন্য আয়তনের অনুপাতে প্রয়োজনীয় লম্বা ও আধা ইঞ্চির মতোচওড়া পাতি নেব। বুননের সময় প্রয়োজনবোধে পাতির মাথার উপর নতুন পাতি বসিয়ে জোড়া দিয়ে আরো লম্বা করতে পারি। মুর্তার পাতি একটু চওড়া হলে সাধারণত তার গায়ে লম্বালম্বি থাকে। যাতে চাটাই মোলায়েম হয় ও দেখতে ভালো লাগে। দুধারা পদ্ধতিতে চাটাই বুনতে হয়। চতুর্দিকে দেড় থেকে দুই ইঞ্চি পাতি বাড়তি রেখে বুনন শেষ করি। এবার পাতির বাড়তি অংশ নিচের দিকে একটি একটি করে ভাঁজ সরু করে চেরা পাতি বেত দিয়ে বেঁধে নেব। একে চাটাইর মুড়ি বাঁধা বলে। উপরের ছবিতে মুড়ি বাঁধার পদ্ধতি দেখে নিই। বাঁধানোর বেত কীভাবে চালাতে হবে খুব ভালো করে লক্ষ করি।

মাদুর

চাটাই তৈরি শেখার পর মাদুরে হাত দিই। মাদুর সাধারণত শোয়া ও বসার জন্য ব্যবহার করা হয়। নকশা করা সুন্দর সুন্দর মাদুর জায়নামাজ হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। ঘর সাজানোর জন্য সুন্দর নকশা করা মাদুর আজকাল শহরবাসীদের সমাদর লাভ করেছে। মাদুরের জন্য দেড় সুতা পরিমাণ চওড়া পাতলা পাতির প্রয়োজন। বুনে নকশা করার জন্য রঙিন পাতিও লাগবে। রং ছাড়া পাতি লম্বালম্বিভাবে সাজিয়ে রঙিন পাতি আড়াআড়ি বসিয়ে নকশার প্রয়োজনমতো এক ধারা, দুধারা, তেধারা ইত্যাদি পদ্ধতি মিলিয়ে বুনে যাই। বুনন শেষ হলে মুড়ি বাঁধার পদ্ধতিতে মুড়ি বেঁধে নিই। চাটাইর মুড়ি বাঁধার জন্য যে বেতের ফালি ও সরু বেত ব্যবহার করেছি, মাদুরের জন্য তার চাইতে সরু ফালি ও বেত ব্যবহার করব। এবার আমরা আমাদের জন্য ছোট বড় মাদুর তৈরি করতে পারব।

মুর্তার তৈরি জিনিসের মধ্যে পাটির কদর সবচেয়ে বেশি। গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে বিছানার উপর পেতে শোয়া খুবই আরামদায়ক। এতে গরম কম লাগে বলে পাটিকে শীতলপাটিও বলা হয়। ভালো পাটি বিশেষ করে সুন্দর নকশা করা পাটিও তার জন্য সূক্ষ্ম পাতলা পাটি তৈরি করতে বহুদিনের অভিজ্ঞতা ও উচ্চমানের কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন। এখন আমাদের পক্ষে এ কাজ করা কঠিন। তবুও অতি সাধারণ পাটি বুনার পদ্ধতি সম্পর্কে সামান্য ধারণা নিয়ে রাখছি।

শেখার জন্য মাদুর তৈরির উপযোগী পাতি দিয়ে পাটি বুনার চেষ্টা করতে পারি। পাটি বুনতে চাটাই বা মানুরের মতো লম্বালম্বি ও আড়াআড়িভাবে আলাদা আলাদা পাতি ব্যবহার করার প্রায়োজন হয় না। বুননও লম্বা বা চওড়ার দিক থেকে আরম্ভ করতে হয় না। পাটির বুনন আরম্ভ হয়ে এক কোণ থেকে এবং একই পাতি ভাঁজ হয়ে আড়াআড়ি থেকে লম্বালম্বি পাবার প্রয়োজনবোধে লম্বালম্বি থেকে আড়াআড়িভাবে চলে যায়। এতে পাটির চারদিকে বাড়তি পাতি থাকে না, আপনা থেকেই মুড়ি বন্ধ হয়ে যায়, চাটাই বা মাদুরের মতো মুড়ি বাঁধার প্রয়োজন হয় না। প্রথমে একটি পাতি নিয়ে ছবিতে দেখানো নিয়মে ভাঁজ করি। আরেকটি পাতি নিয়ে ছবি দেখে প্রথমে আড়াআড়িভাবে বসিয়ে দুদিক ভাঁজ করে লম্বালম্বি দিকে নিয়ে যাই। ভাঁজ করার সময় লক্ষ রাখবে পাতির পিঠ যেন সব সময় উপরের দিকে থাকে। তার জন্য দুবার ঘুরিয়ে ভাঁজ করতে হবে। এবার তৃতীয় পাতি নিয়ে অনুরূপ ভাবে বুনে যাই। সাধারণ পাটির বুনন হবে দুধারা পদ্ধতিতে। এভাবে একের পর এক পাতি বসিয়ে বুনে যাই। একটা জিনিস খেয়াল করি এ পর্যন্ত বুননের সময় পাতি প্রথমে আড়াআড়ি বসিয়ে ভাঁজ করে লম্বালম্বি করা হয়েছে। বুননের সাথে সাথে পার্টির লম্বা ও চওড়া দুদিকেই সমানভাবে বাড়ছে। পাটি চওড়ার চেয়ে লম্বা বেশি হয়। পাটি প্রয়োজনমতো চওড়া হয়ে গেলে এবার লম্বালম্বি পাতি ভাঁজ করে আড়াআড়ি করব। আবার প্রয়োজনবোধে আড়াআড়ি থেকে লম্বালম্বি করব। পাটির নম্বার দিকের একপাশ প্রয়োজনমতো লম্বা হয়ে গেলে পাতি ভাঁজ করে করে বুনে বাকি অংশটা শেষ করব।

পাঠ : ১৩, ১৪ ও ১৫

টাই ও ডাই

উপকরণ : কাপড়, সুতা, আলপিন, সেফটিপিন, নুড়ি, ছিপি, বোতাম, ধান, সোডা (কাপড় কাচার ), লবণ, চা চামচ, বড় চামচ, রং, বোল বা বাটি, গুঁড়ো মাপাবার নিক্তি, কেরোসিন স্টোভ, কাপড় ধোবার চাড়ি বা ডাবর, বালতি, বাটিক ফাস্ট কালার, ডাইলন রং, ইসি ইত্যাদি।

টাই ও ডাই প্রণালিতে প্রস্তুত মনোমুগ্ধকর কারুশিল্প বহু শতাব্দী পূর্ব থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সমৃদ্ধি লাভ করেছে। প্রতিবন্ধক সৃষ্টি প্রক্রিয়ার সাহায্যে এই পদ্ধতিতে কাপড়ের মধ্যে রং লাগিয়ে আকার, রূপ, রং ও নকশা সৃষ্টির দ্বারা এমন মনোরম কারুশিল্প সৃষ্টি করা যায় না। আধুনিক জীবনের জটিলতাজনিত টানাপোড়েনের হাত থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য মানুষ ক্রমশই সৃজনশীল গৃহ নৈপুণ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং সেই হেতু কখন ও রঞ্জন প্রণালির কারুশিল্প বিশেষভাবে ভাব সঞ্চারী আবেদন সৃষ্টি করেছে, কারণ এটি একটি সুন্দর শিল্প। এই প্রণালিতে প্রস্তুত কারুশিল্প আকর্ষণীয়তায় এবং ব্যবহারোপযোগিতায় অনন্য। কখন রঞ্জন' প্রণালিতে রঞ্জিত কাপড় বা চিত্তাকর্ষণ ও মনোহরণে অপূর্ব, তা দিয়ে কাপড়, গলাবদ্ধ, রুমাল, ওড়না, চাদর, কুশন, পর্দা, বিছানার চাদর, টেবিলের কাপড় ইত্যাদি হরেক রকম গৃহসজ্জার সামগ্রী তৈরি করা যায়। 'কখন ও রঞ্জনে' প্রকৃত অর্থে এটাই বুঝিয়ে থাকে। কাপড়কে বাঁধা হয়। ভাঁজ করা হয়। সেলাই করা হয়, গেরো দেওয়া হয় অথবা অন্যভাবে আবদ্ধ করা হয়, যাতে করে কাপড়ের সম্পূর্ণ অংশ রঞ্জন পাত্রে ডুবালে ভাঁজ করা অংশে রং প্রবেশ করতে না পারে এবং রঞ্জিত ও অ-রঞ্জিত কাপড় মিলে একটি সুন্দর এবং বর্ণাঢ্য নকশার সৃষ্টি হতে পারে। "বাটিকে কাপড়ের অংশ বিশেষ রং থেকে মুক্ত রাখার জন্য মোম দ্বারা লেপন করা হয়। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির দ্বারা রঞ্জন করার প্রতিটি পদ্ধতি বৈচিত্র্যময় নকশা, সহজ বা জটিল কারুশিল্পকে অসীম সুযোগ এনে দেয়। কখন ও রঞ্জন এবং বাটিক ফাস্ট কালার (বাটিক রং) প্রুশিয়ান রং ও ইন্ডিগো রং ব্যবহৃত হয়, তা ছাড়া 'ডাইলন কোল্ড ওয়াটার ডাই' ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়; কারণ এতে কাপড়ের রং পূর্ণরূপে পাকা হয়, বহুবার লঙ্গিতে

ধোয়ানো হলেও রঙের উজ্জ্বলতা হ্রাস পায় না।

বাটিকের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র

১। একটা মসৃণ সমতল কাঠের টেবিল। (একে ট্রেসিং টেবিল বলা হয়)

টেবিলের মাপ অনুসারে কাচের টুকরা উপরে থাকবে।

২। মোমের কাজ করার জন্য একটি কাঠের মসৃণ এবং সমতল টেবিল দরকার। এটি যেন খবরের কাগজ বা শক্ত

হার্ডবোর্ড দিয়ে ঢাকা থাকে। এররকম টেবিলে মোমের কাজ করা ভালো ।

৩। গ্যাসের/কেরোসিনের চুল্লি (স্টোভ)।

৪। এলুমিনিয়াম বা হাতলযুক্ত পাত্র।

৫। রজন (Resin) এবং চাক মোম ( মৌচাকের মোম)।

৬। ব্লক এবং ব্রাশ (মোটা, চিকন)।

৭। একটা কাঠের তৈরি ফ্রেম। এর সাহায্যে নকশাতে মোম লাগাতে সুবিধা হবে। তার আগে কাপড়কে ফ্রেমে আটকাতে হবে। (কাজ করার সময় সতর্ক হয়ে কাজ করা দরকার)।৮। কাপড়ের নকশা আঁকার জন্য পেনসিল, কার্বন কাগজ এবং মাঝারি শক্ত পেনসিল ।

১। বালতি বা টব। (এনামেল বা প্লাস্টিকের)।

১০। রং মেশাবার জন্য ছোট আকারের স্টিলের পাত্র বা প্লাস্টিকের গামলা।

১১। মেজারিং সিলিন্ডার (মাপার যন্ত্র)। এর সাহায্যে তরল পদার্থকে মিমি. ও লিটারে মাপা যায়। (কাচ বা প্লাস্টিকের

তৈরি)।

১২। রাবার বা প্লাস্টিকের শীট।

১৩। হাতের গ্লাভস বা দস্তানা। (এটি পাতলা রাবারের তৈরি)

১৪। পুরাতন খবরের কাগজ। (কাজ করার জায়গা ঢাকার জন্য)

১৫। বড় এবং ছোট আকারের প্লাস্টিকের চামড়া।

১৬। বাটিক প্রিন্টের জন্য উপযুক্ত ধবধবে সাদা সুতি কাপড়।

বাটিকের কাজ

এ কাজে ব্যবহৃত সাজসরঞ্জামও খুবই সুলত ও সাধারণ। রঞ্জন ক্রিয়া আগাগোড়া ঠাণ্ডা পানিতেই সম্পন্ন করা হয়, তবে আলগা রং উঠিয়ে ফেলার জন্য সবশেষে পাঁচ মিনিটের জন্য ফুটন্ত পানিতে চুবিয়ে রাখতে হয়। কখন ও রঞ্জনের পর কাপড় ভালোরূপে ধুইয়ে ভালো করে ইস্ত্রি করতে হবে। পেনসিল দিয়ে নকশা এঁকে নিতে হবে,

নমুনাটি সুই-সুতা দিয়ে বখেয়া ফোঁড় দিয়ে সুতা টেনে বাঁধতে হবে, রং করতে হবে, ধুইয়ে নিতে হবে। অথবা নকশা ছাড়াও সাধারণভাবে বেঁধে নিলেও হবে। এছাড়া বিভিন্ন কৌটার মুখ বা অন্যান্য জিনিস ভিতরে বাঁধা যায়।

রং করার পদ্ধতি

১ টিন রং=১০ গ্রাম, ১/৩ আউন্স অথবা ২ বড় চা চামচ, ৪ বড় চামচ লবণ-আনুমানিক ১১২ গ্রাম অথবা ৪ আউন্স ১ বড় চামচ সোডা- আনুমানিক ৪২ গ্রাম অথবা ১.৫ আউন্স।

উল্লেখিত জিনিস ২০ আউন্স পরিমাণ তরল রং তৈরি করতে হবে। স্বপ্ন এবং অধিক পরিমাণের জন্য রং, লবণ ও সোডা উপরে বর্ণিত অনুপাতে নিতে হবে। ১ টিন রং এক পাউন্ড পানিতে দ্রবণ করতে হবে। নাড়াচাড়া করতে হবে। ৪ বড় চামচ সাধারণ লবণ এবং ১ বড় চামচ সাধারণ সোডা এক পাউন্ড গরম পানিতে প্রবণ করতে হবে নাড়াচাড়ার মাধ্যমে ঠাণ্ডা করতে হবে। যখন নমুনা প্রস্তুত হবে, কিন্তু তার আগে নয়, সলিউশন দুটি মিশ্রণ করতে নমুনাটি ভিজানো এবং ১.৫ ঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত রং করতে হবে। প্রথম ১০ মিনিট নাড়াচাড়া করা এবং এরপর কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে। প্রথম ১০ মিনিট নাড়াচাড়া করা এবং এরপর কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে।

যখন রং করা শেষ হবে, তখন নমুনাটি পাত্র থেকে উঠিয়ে ফেলতে হবে এবং পানি না শুকানো পর্যন্ত চিপড়াতে হবে। ফুটন্ত পানিতে নমুনাটি ঢেকে রাখতে হবে (সিল্ক এবং উলের জন্য গরম পানি) মাঝে মাঝে নাড়াচাড়া করতে হবে, এইভাবে পাঁচ মিনিট রাখতে হবে। উত্তমরূপে পানি দ্বারা পরিষ্কার করা এবং শুকানো, একত্রিত করে এবং পানি ধারা পরিষ্কার করতে হবে। যখন নমুনা একত্রিত হয়ে যায়, তখন দ্বিতীয়বার গরম পানিতে ধৌত করা উত্তম। শেষবার ধৌতকরার পর নমুনাটি ইস্ত্রি করতে হবে, তাতে ভাঁজের দাগ এবং আর্দ্রতা দূর হয়ে যাবে। দ্বিতীয় রঙে রঞ্জিত করতে হলে পয়েন্টে বাঁধতে হবে। পয়েন্ট পূর্ণ কখন করে এইভাবে সজ্জিত করতে হবে যেন বাঁধানোর বাইরের অংশ প্রয়োজনীয় রঙে রঞ্জিত হতে পারে। দ্বিতীয় রঙের জন্যও রঞ্জন প্রক্রিয়া একইভাবে করতে হবে। নমুনাটিকে একত্রিত করার জন্য গেরো বাঁধার সুতা কেটে ফেলতে হবে।

একবার সোডা মিশ্রণ করলে রটি ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। রং যদি প্রয়োগের কিছু পূর্বে মিশ্রণ করতে হয়, তবে রঙের সলিউশন এবং লকা ও সোডার সলিউশন দুটি আলাদাপাত্রে রাখতে হবে। তারপর প্রত্যেকটি সমপরিমাণে মিশ্রণ করতে হবে। ছিপি খুব এঁটে লাগালে এই রং বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা চলে। ডাইলন কোল্ড ওয়াটার ডাই কাপড়, লিলেন, ভিসকোস রেয়ন সিঙ্ক এবং উপের জন্য আদর্শ রঞ্জক।

কখন ও রঞ্জনের কলাকৌশল

গ্রন্থি বা গেরো পরীক্ষার জন্য একটি গ্রন্থি বাঁধতে হলে দেখতে হবে এতে কতটুকু কাপড় লাগে, গ্রন্থির অবস্থা চিহ্নিত করতে হবে। 

১নং প্রণালি : একটি কাপড় লম্বালম্বিভাবে অর্ধেক করে ভাঁজ করতে হবে, এটি পাক দিতে হবে এবং প্রথম চিহ্নিত স্থানে একটি গ্রন্থি বাঁধতে হবে। প্রদর্শিত গ্রন্থির ন্যায় ফাঁক ফাঁক করে গ্রন্থিগুলো বাঁধতে হবে।

২নং প্রণালি : কাপড়ের একটি স্বল্পতম নির্দিষ্ট অংশ তুলতে হবে, এটি পাক দিতে হবে এবং একটি গ্রন্থি বাঁধতে হবে।

নমুনার পরিকল্পিত স্থানে আবার ঐরূপ করতে হবে। যদি কাপড়ের আয়তক্ষেত্রের মধ্যভাগে গ্রন্থিটি বাঁধা হয়, তবে

প্রত্যেক কোণে অন্য গ্রন্থিগুলো বাঁধতে হবে

সকল প্রণালির জন্য গ্রন্থিগুলো এঁটে বাঁধতে হবে এবং প্রথম রটি দিতে হবে পুনরায় গ্রন্থিগুলো বাঁধতে হবে এবং দ্বিতীয় রটি দিতে হবে। পরে পানি দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। গরম পানিতে ধুয়ে শুকাতে হবে। স্কু ঘুরানোর ন্যায় গ্রন্থিগুলো প্রত্যেক পার্শ্ব পাকিয়ে একত্রিত করতে হবে। গ্রন্থিগুলো তখন একত্রিত করার পক্ষে বেশ আলগা ও সুবিধাজনক হয়ে উঠবে। পরে ধুয়ে শুকাতে হবে।

সকল প্রকার বাঁধনের জন্য শক্ত সুতা, নাইলন সুতা ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। লম্বালম্বিভাবে কাপড় জড়ো করা অথবা ভাঁজ করতে হবে। সুতোর এক পার্শ্বে গেরো দিতে হবে। কিছুক্ষণ পরপর সরু বাধন দিতে হবে। ডোরার উপর শক্ত বাঁধন দিতে হবে। তাড়াতাড়ি বেঁধে বা উপরোক্ত তিন প্রকারের মিশ্রণ গেরো বেঁধে, শক্ত করে বাঁধতে হবে এবং রং করতে হবে। রং করার পূর্বে আরও রং যোগ করা যায় অথবা গ্রন্থি পরিবর্তন করা যায়।

চতুষ্কোণ : এক প্রস্থ মিহি কাপড় চার ভাঁজ করে তারপর তাকে একটি ত্রিভুজাকারের রূপ দিতে হবে। সবগুলো বেঁধে পরে রং করতে হবে।

মার্বেল রং : ছোট নমুনা নিয়ে কাপড় হতে গুচ্ছ করতে হবে। সুতার গ্রন্থি বাঁধতে হবে। একটি শক্ত বর তৈরি করার

জন্য এটিকে সব স্থানে বাঁধতে হবে। টেবিলের উপর কাপড় সটান করে রাখতে হবে। কাপড়ের এপাশে ওপাশে কাজ করে এবং কাপড়ের নির্দিষ্ট অংশ ফাঁক করে গোলাকৃতি করতে হবে যাতে করে পাড়ে ভাঁজ পড়ে। কাজ করার সময় একটি আলগা বাঁধন দিতে হবে। যখন

সমস্ত কাপড় গুচ্ছাকৃতি হয়ে যায় তখন একটি শক্ত গুচ্ছ তৈরির জন্য আরও বাঁধন লাগাতে হবে উভয় প্রণালির জন্যপ্রথমে রংটি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং একত্রিত করতে হবে। কাপড় পুনরায় বিন্যস্ত করে বাঁধতে হবে এবং দ্বিতীয় রং লাগাতে হবে।

ছোট ছোট জিনিস যেমন নুড়ি, ছিপি, বোতাম, ধান ইত্যাদি কাপড় গ্রন্থিত করা যায়। এদের অবস্থান পেনসিলের সাহায্যে 'ডট' দিয়ে চিহ্নিত করতে হবে। প্রথম 'ডটে' কোনো একটি জিনিস কাপড়ের ভেতর রেখে এবং এর চারপাশে সুতা দিয়ে বাঁধতে হবে। সুভাটিকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে এবং পরবর্তী 'ডট' কেও যথাস্থানে বাঁধতে হবে। এর উপর একটি আলগা গ্রন্থি বাঁধতে হবে। এপাশে ওপাশে কাজ করার সময় প্রত্যেকটি জিনিস এইভাবে বাঁধতে হবে অথবা মধ্যভাগ থেকে বহির্ভাগের দিকে বাঁধতে হবে।

পরিবর্তন : কখন-স্থান এক টুকরো ‘পলিথিন দিয়ে ঢেকে ডবল করে বাঁধতে হবে। একটির উপর আর একটি বাঁধতে হবে। জিনিসটিকে ঢেকে একটি খোঁপার মতো করে উপরের দিকে বাঁধতে হবে। পরে রং দিতে হবে। বৃত্ত কাপড়ের একটি নির্দিষ্ট অংশে দিতে হবে। একটি ছোট বৃত্তের জন্য কাপড়ের নির্দিষ্ট অংশে সুতা দ্বারা বেঁধে অপেক্ষাকৃত বড় একটি বৃত্তের জন্য আরও সামনের দিকে অনুরূপভাবে বাঁধতে হবে। নির্দিষ্টস্থানে ডিজাইনের জন্য প্রয়োজনীয় বাঁধন দিতে হবে। বাঁধন দৃঢ় করে পরে রং করতে হবে। অন্য রং দেয়ার পূর্বে বাধন পরিবর্তন অথবা অন্য বাধন যোগ করা যেতে পারে।

ডিম্বাকৃতি এবং অসমকোণী ত্রিভূজ

আকৃতির মধ্যভাগ বরাবর কাপড় ভাঁজ করে তাঁদের বিপরীতে অর্ধেক ডিম্বাকৃতি এবং অসমকোণী ত্রিভুজ তৈরি করতে

হবে। পেনসিলের লাইন বরাবর 'সেফটিপিন' দ্বারা বুনন করতে হবে। পিন আটকানো, পিনের নিচে সুতা দিয়ে বাঁধানো পিন সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনমতো পাখার আকৃতি বিশিষ্ট নমুনা বেঁধে দৃঢ় করতে হবে। প্রত্যেক আকৃতির জন্য এই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করতে হবে। পরে রং লাগাতে হবে। অন্য রং দেয়ার পূর্বে বাধন পরিবর্তন অথবা অন্য বাঁধন যোগ করা যেতে পারে।

পাঠ: ১৬ ও ১৭

বাটিক

উপকরণ : ট্রেসিং পেপার, জলরং তুলি (নং ২ ও ৩), পোস্টার কাগজ, তেলরঙের তুলি (নং ৪ ও ৮) লাল ও সাদা মোম, লবণ, সোডা (কাপড় কাচা), এলজিনেট (গুঁড়া জাতীয় আঠা), কাপড় ফিটকারী, সোডিয়াম নাইট্রেট, সালফিউরিক এসিড, মনোপল সপ, কস্টিক সোডা নেপথল রং (বাটিক রং), ফার্স্ট কালার (বাটিক রং), প্রুশিয়ান রং, ইন্ডিগো রং ইত্যাদি।

বি: দ্র: নতুন কাপড় প্রথমে ব্যবহার করার পূর্বে সাবান দিয়ে ধুয়ে ইসির করা একান্ত প্রয়োজন।

বাটিক সৃষ্টিশীল কাজের অন্যতম মাধ্যম। এর ইতিহাস বা উৎস সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছু বলা মুশকিল। তবে বাটিকের উৎপত্তি সম্পর্কে এটুকু বলা যেতে পারে যে, এর প্রচলন প্রাচ্য দেশসমূহে বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ার জাভা, বালি ও তৎসংলগ্ন দেশসমূহে ব্যাপকভাবে দেখা যায়। বর্তমানে এ সকল দেশে বাটিকশিল্প এক গৌরবময় ঐতিহ্যের সূচনা করেছে এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ সকল দেশ হতে বাটিকশিল্প ক্রমান্বয়ে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে অনেক দেশে বাটিক কাজ দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশেও বাটিকের কাজ বর্তমানেবেশ দেখা যায় দেশের সর্বত্রই এর প্রচলন পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেউ কেউ উন্নয়ন প্রকল্পের গবেষণায় বাটিক কাজ করে যাচ্ছেন। আর কেউবা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই শিল্পকে ব্যবহার করছেন। বর্তমানে আমাদের দেশে বাটিক কাজ দুটি পদ্ধতিতে করা হয়, যথা- (১) Nepthol color (2) Procion color (reactive dyes)

প্রথমে বাটিক উপযোগী নকশা অঙ্কন করে পরে ট্রেসিং পেপারের সাহায্যে নকশা কাপড়ে উঠাতে হয়। নেগগুল রং করার প্রণালি : বাটিক কাজ করার পদ্ধতিতে ধারাবাহিক পাঁচটি স্তর রয়েছে। তা জেনে নিই।প্রথম স্তর: প্রথম পর্যায় নকশা অনুযায়ী কাপড়টিতে যেখানে রং ব্যবহার করা হবে সে অংশটুকু ছাড়া বাকি অশে ‘মোম-গরম করে তুলি দিয়ে নকশার স্থান কাপড়ের উভয় পার্শ্বে লাগাতে হবে (স্বভাবতঃ কাপড়ে মোমে আবৃত করা স্থানে রং লাগবে না)। রং করার পূর্বে ১০-১৫ মিনিট পর্যন্ত কাপড়টি ভিজিয়ে নেওয়া একান্তই প্রয়োজন। দ্বিতীয় স্তর নকশা করা কাপড়টি রং মিশ্রিত পানিতে প্রথমে প্রথম পাত্রে ও পরে দ্বিতীয় পাত্রে ২-৩ মিনিট রাখার পর

একই প্রক্রিয়ায় বার বার চুবাতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় ডুবালে রং পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠবে।

তৃতীয় স্তর : নকশা অনুযায়ী রং করার পর পুনরায় অন্য রঙের ব্যবহারের জন্য ও এই রংটি রাখার জন্য প্রয়োজনবোধে মোম যারা একই পদ্ধতিতে কাপড় আবৃত করে পারে চুবাতে হবে। মনে রাখতে হবে একই প্রক্রিয়ায় বারবার পাত্র পরিবর্তন করে চুবানো হয়। এভাবে কাপড়ে অনেক প্রকার রঙের ব্যবহার করা যায়।

চতুর্থ স্তর : কাপড়টি রোদহীন ঠাণ্ডা জাগায় একটানা ১২ ঘণ্টা ছায়ায় শুকাতে হবে।পঞ্চম স্তর : অম্ল ক্ষারযুক্ত সাবান ফুটন্ত পানিতে মিশ্রিত করে কাপড়টি অতি যত্নসহকারে সেই পানিতে ৪-৫ মিনিট কাপড়টি রাখার পর ছায়ায় শুকাতে হবে। এইভাবে Nepthol color process-এ বাটিক প্রিন্ট হয়ে থাকে। মোম তৈরি করণ : সম-পরিমাণ প্যারাফিন মোম (সাদা মোম) ও ভিউ মোম ( লাল মোম অর্থাৎ মৌমাছির মৌচাকের মোম)

একত্রিত করে ব্যবহার করতে হয় ।মোম গলাবার পদ্ধতি

একটা স্টিলের তৈরি বাটিতে প্রথমে মধুমোম গলিয়ে কিছুটা ঠান্ডা করার পর তার সঙ্গে সাদা মোম মেশাব। এটা গলে যাবার পর রজন গুঁড়া মেশাব। সাদামোম পাত্র চুলার উপর রাখা অবস্থায় স্টিলের হাতা বা বড় চামচ দিয়ে নাড়ব। এইভাবে নেড়েচেড়ে অন্যান্য নোংরা জিনিসগুলো চামচ দিয়ে ফেলে দিব। মোম গলে গেলে নকশায় মোম লাগাব। যখন পরিষ্কার মিশ্রণটা পাওয়া যাবে তখন সেই গলিত মোমকে কাপড়ে ব্রাশের সাহায্যে লাগাব। অবশ্য তার আগে দেখে নেব মিশ্রণ থেকে বাদামি রঙের ধোয়া উঠছে কিনা, এই রঙের ধোঁয়া দেখতে পেলেই পাত্রটা চুলার ওপর থেকে নামিয়ে ফেলব। চুলার তাপে পাত্র সরাসরি বসিয়ে মোম লাগাবনা। এতে পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ বেশি তাপ লাগলে মিশ্রণ রং করার সময় কাপড় থেকে ঝরে পড়ে যেতে পারে।

(ক) Nepthol As অথবা Branthol AS-3%

(খ) Fast Red salt GL অথবা Branthol Salt-6%

(গ) মনোপল সপ অথবা TR Oil - 3%

(ঘ) বলন-১২%

(ঙ) কস্টিক সোডা- ১.৫%শুধুমাত্র Base color এর কাজ করার সময় দ্বিতীয় পাত্র পরিবর্তন করতে হবে। যেমন-

বিশগুণ পানিতে।

(ক) ফিটকারী-৬৫

(খ) সোডিয়াম নাইট্রেট-৩%

(গ) সালফিউরিক এসিড (H2SO4)

অথবা হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCL)=3%

() Fast Red KB-3%

Fast color বাটিক রঙের বিভিন্ন নামকরণ রয়েছে। যেমন- Fast color= Red KB কেবল Nepthol - AS এর বেলায় প্রযোজ্য। কোনো ন্যাপথল, ব্রেনথল ইত্যাদির সাথে কোনো Salt বা Base যোগ করলে কী কী রং পাওয়া যায়, নিচের চার্টে তা জেনে নিই।

M=Napthol

As+Fast Red Salt GL

লাল=Napthol

As+Scarlet Salt GG

Napthol

As-Fast Scarlet R

-Napthol

As+BS+Fast Red Salt R

=Napthol

As-TR+Fast Red Salt TR

Napthol

As-BO+Fast Red Scarlet Salt R

Napthol

As-RL+Fast Red Scarlet Salt R

লাল=Branthol

As+Fast Red KB Base

M=Branthol

As+Fast Red Scarlet R Base

-Branthol

MN+Fast Red Scarlet G Base

=Branthol

BN+Fast Red Scarlet G Base

-Branthol

BN+Fast Red Scarlet R Base

M-Branthol

BN+Fast Red KB Base

Branthol

CT+Fast Red Scarlet G Base

M=Branthol

CT+Fast Red Red KB Base

কমলা =Napthol

AS+Fast Orange Salt GC Base

কমলা =Napthol

AS+Fast Orange Salt GR Baseকমলা = Branthol

AS+Branthol fast Yellow GC

লাল=Branthol

AS+Branthol fast Orange GC Base

লাল-Branthol

AS+Fast Orange GR Base

লাল=Branthol

MN+Fast Orange GC Base

লাল-Branthol

CT+Fast Orange GC Base A

খয়েরি= Napthol

AS-BO+Napthol Red Salt B

খয়েরি= Napthol

AS + Napthol Garnet GBC Salt

খয়েরি= Napthol

AS+Bardo Salt GP Salt

খয়েরি= Branthol

AS+Branthol Bardo CP Base

খয়েরি= Branthol

AS+Branthol Fast garnnet GBC Base

খয়েরি= Branthol

MN+Branthol Fast Garnnet GBC Base

খয়েরি= Branthol

AN+Branthol Fast Garnnet GBC Base AN+Branthol Fast Bardo GP Base

খয়েরি= Branthol

খয়েরি= Branthol

BN+Branthol Fast Bardo GP Base

খয়েরি= Branthol

BN+Branthol Fast Bardo GBC Base

নীল = Branthol

AS+Branthol Fast Blue Salt B

নীল = Branthol

AN+Branthol Fast Blue Salt B

নীল = Branthol

BN+Branthol Fast Blue Salt B

নীল = Napthol

AS+Fast Blue Salt BB

নীল = Napthol

AS+ Fast Blue Salt BR

নীল = Napthol

AS-TR+Fast Blue Salt BR

নীল = Napthol

AS-OL+Fast Blue Salt BB

হলুদ = Napthol

AS-G + Fast Yellow Salt GC

হলুদ = Napthol

AS-G+Scarlet Salt GC

হলুদ = Branthol

AT+Branthol Yellow GC Baseব্রেনথল ও ন্যাপথলের সমতুল্য তালিকা

Branthol AS-Napthol AS

Branthol MN Napthol AS-BS

Branthol AN-Napthol AS-BO

Branthol PA=Napthol AS-RL

Branthol NG-Napthol AS-GR

Branthol BT-Napthol AS-BL

Branthol RB-Napthol AS-SR

Branthol FR-Napthol AS-OL

Branthol GT-Napthol AS-TR

Branthol DA-Napthol AS-BS

Branthol FD=Napthol AS-RG

Branthol AT-Napthol AS-G

Branthol BN=Napthol AS-SW

প্রুশিয়ান রং করার প্রণালি : এই পদ্ধতিটি Nepthol color process এরই অনুরূপ। তবে মোম তৈরিকরণ একটু ভিন্ন ধরনের। যথা-সাদামোম ৪ ভাগ+রজন ২ ভাগ+ লাল মোম ১ ভাগ একত্রিত করে ব্যবহার করব।

Precion Color Process-এর রং করা পদ্ধতি: প্রথম পাত্রে প্রয়োজনানুসারে রং (Procion) ও লবণ ৩০% ভাগ অল্প পানিতে মিশ্রিত করব। দ্বিতীয় পাত্রে ২০ গুণ পানিতে প্রথম পাত্রের প্রস্তুত রং মিশ্রিত করে ভেজা কাপড়টি আধঘণ্টা নাড়াচাড়া করব। অতঃপর কাপড়টি উঠিয়ে ৮% ভাগ সোভা (কাপড় কাচা) মিশিয়ে পুনরায় রং করা কাপড়টি আধঘণ্টা নাড়াচাড়া করব, এরপর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ২৪ ঘণ্টা ছায়ায় শুকাতে দিব। শুকনো কাপড়টি অতঃপর ভিজিয়ে ফুটন্ত পানিতে ৪-৫ মিনিট নাড়ালে মোমগুলো পৃথক হয়ে যাবে।

প্রয়োজনানুসারে কাপড় রং করতে হলে-

হালকা রং এর জন্য ১ তোলা থেকে ২ তোলা

মাঝারি রং এর জন্য ২ তোলা থেকে ৩ তোলা

গাঢ় রং এর জন্য ৩ তোলা থেকে ৪ তোলা

বি: দ্র: ১০০ তোলা কাপড়ের ওজনে।

প্রুশিয়ান রঙের তালিকা : Blue M, R, Blue M, R, Red MB, Red M, B, Yellow M, G, Orange MR ইত্যাদি ।Nepthol অথবা Procion color পদ্ধতি ছাড়াও বাটিক প্রিন্ট কাপড়টিতে নকশা অনুযায়ী সবুজ, নীল বা বেগুনি রং রাখতে হলে Cold Dying করার পূর্বে যেখানে যে রং ব্যবহার করা হয়, তা Pigment process এ করা হয়ে থাকে।

Pigment Process পদ্ধতি বাজারে Indigo color বিভিন্ন রঙের পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ এক গ কাপড়ের Pigment Process এর রং করতে হলে Indigo color সিকি তোলা নিতে হবে। ১/৪ ছটাক পানি ফুটিয়ে গরম অবস্থায় সুজানা (১/৮ তোলা) সোডিয়াম নাইট্রেট মিশাতে হবে। পরে সিকি তোলা রং সোডিয়াম নাইট্রেট মিশ্রিত পানিতে ঠাণ্ডা করতে হবে অন্যদিকে আঠা Alginate (গুঁড়া জাতীয় আঠা) কুসুম গরম পানিতে ৫ মিনিট মিশালে আঠায় পরিণত হবে। অতঃপর প্রস্তুত Alginate আঠা ঠাণ্ডা রঙে মিশাতে হবে।

নকশা করা কাপড়টি প্রয়োজন অনুসারে ১নং তুলি ব্যবহার করার মতো প্রস্তুত রং তুলি নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এভাবে বিভিন্ন ধরনের "Indigo Color' নকশা অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অতঃপর রং করা কাপড়টি ২/১ চা চামচে সালফিউরিক এসিড মিশ্রিত পানিতে নাড়ালে Indigo color এর প্রকৃত রং বেরিয়ে আসবে। এই পদ্ধতিকে 'Pigment Process বলে।কাপড় ছাপা

ছাপা কাপড় আমরা সবাই কমবেশি ব্যবহার করি। আমাদের পাঞ্জাবি, জামা, বিছানার চাদর, শাড়ি, ব্রুক, ওড়না ইত্যাদি রং-বেরঙের ছাপা কাপড় দিয়ে তৈরি করে থাকি। কাপড় ছাপার পদ্ধতি জানা থাকলে আমরা নিজেরাই আমাদের পছন্দমতো কাপড় ছেপে ব্যবহার করতে পারি।ছাপার আগে কাপড়কে উপযোগী করে নিতে হবে, নইলে ভালো ছাপা বা রং ধরবে না। কোড়া কাপড় বা মাড় দেয়া কাপড়ে ভালোভাবে রং ধরে না। তাই কোড়া কাপড়ের ওজনের ১০ গুণ পানি নিয়ে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২ তোলা সাবান, ২ তোলা কাপড় কাচা সোডা ও ৩ ভোলা কস্টিক সোডা ২/৩ ঘন্টা সিদ্ধ করে প্রথমে গরম ও পরে ঠান্ডা পানিতে ভালো করে ধুয়ে নেব। ধোলাই করা কাপড় হলে শুধু সাবান পানিতে ১৫/২০ মিনিট সিদ্ধ করে ভালো করে ধুয়ে নিলেই কাপড় ছাপার জন্য তৈরি হয়ে গেল। এবার ছাপার পদ্ধতির কথা জানব-

টাই এন্ড ডাই

সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিতে অথচ আকর্ষণীয় কাপড় ছাপার জন্য টাই এন্ড ডাই করা হয়। নামটা ইংরেজি। এর বাংলা করলে হবে ধাঁধা এবং রং করা। আমরা বহুল প্রচলিত টাই এন্ড ডাই নামটাই ব্যবহার করব। এ পদ্ধতিতে কাপড় বাঁধার জন্য শক্ত সুতা ও রং করার প্রয়োজনীয় জিনিস রাখব। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে কাপড়ের নির্দিষ্ট স্থানে সুতা নিয়ে শক্ত করে বেঁধে রঙে চুবিয়ে অথবা রং ঢেলে নিজেই হবে। বাঁধা জায়গায় রং না লেগে এক ধরনের নকশার সৃষ্টি হবে। নির্দিষ্ট কোনো নকশা না হলেও অত্যন্ত আকর্ষণীয় নকশার সৃষ্টি হয়। নির্দিষ্ট নকশা করার জন্য সুঁই সুতার সাহায্য নেব। শাড়ি, লুঙ্গি অথবা অন্য কোনো কাপড়ে পরিমিত আকারে বর্গক্ষেত্র, আয়তক্ষেত্র, বৃত্ত, বরফি, ফুল পাতা বা অন্য কোনো নকশা কাপড়ে এঁকে নেব। এবার কাঁথা সেলাইয়ের ফোড় দিয়ে পার্শ্ব রেখা বরাবর সেলাই করে এবং সুতার দুই প্রাপ্ত আস্তে আস্তে টেনে নকশার ভেতরের কাপড় লম্বা করে টেনে নেব। সেলাই পর্যন্ত সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে শক্ত করে বেঁধে নেব। বাঁধার সময় কিছু জায়গা ফাঁক থাকলে ভালো হয়। এভাবে সব কটি নকশা বেঁধে নিতে হবে। তারপর রঙে

ডুবিয়ে নিয়ে নেড়েচেড়ে নিলেই হলো। একবার বেঁধে রঙে ডুবালে এক রং, এমনিভাবে একাধিক রঙের জন্য কয়েকবার বেঁধে রঙে ডোবাতে হবে। প্রত্যেকবার বাঁধার আগে কাপড় ছায়ায় রেখে শুকিয়ে নেব। একাধিক রং করার সময় হালকা রং থেকে শুরু করব।

এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট কোনো নকশা ছাড়াও বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে বাঁধার মাধ্যমে আকর্ষণীয় ও রুচিসম্মতভাবে কাপড় ছাপানো যায়। এই পদ্ধতিতে কিছু বাঁধার নমুনার ছবি দেখে নিই।মোম বাটিক

উপকরণ : এই পদ্ধতিতে কাপড়ে নকশা করার নিয়ম অনেকটা টাই এন্ড ডাই পদ্ধতির মতো। অর্থাৎ নকশায় রং লাগতে না দিয়ে সমস্ত কাপড়ে রং লাগতে দেয়া। নকশায় যাতে রং লাগতে না পারে তার জন্য বিশেষ মোম দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এভাবে বিভিন্ন রং করে শাড়ি, ব্লাউজ, বিছানার চাদর, পর্দা, জামার কাপড়, ওড়না ইত্যাদি নকশা করা যায়।

এই পদ্ধতিতে সুন্দর ছবিও করতে পারি। যাকে বাটিকের ছবি বলে। এক রঙের বাটিক করতে সরাসরি কাপড়ের উপর পেনসিলে ড্রইং করে সেভাবে মোম লাগিয়ে রং করলেই চলবে। কিন্তু একাধিক রং হলে কাগজে রঙিন নকশা এঁকে নেব এবং পর্যায়ক্রমে মোম করব। কার্বন কাগজের সাহায্যে কাপড়ে নকশাগুলো এঁকে নিয়ে কাপড়ের সাদা অংশের দুপিঠেই মোম দিয়ে ঢেকে দিব। প্রথমে হলুদ রঙে চুবিয়ে ভালো করে রং করে নিই, তারপর ঠাণ্ডা পানিতে সামান্য ধুয়ে শুকিয়ে আবার হলুদ নকশার অংশ মোম দিয়ে ঢেকে দিব। এরপর পূর্বের মতো রঙে চুবিয়ে শুকিয়ে নিই এবং পরবর্তী হালকা রঙের অংশ মোম দিয়ে ঢেকে সেই। সবশেষে গাঢ় বা কালো রং করতে হবে।বাটিকের কাজে সব সময় ঠাণ্ডা রং ব্যবহার করতে হয়। টাই এন্ড ডাই এর মতো বাটিকের জন্য একই নিয়মে রং

করতে হয়। তাই পরবর্তী অধ্যায়ে রং তৈরির শিখন পদ্ধতি শিখে নিই।

এবারে বাটিকের মোম তৈরির পদ্ধতি জেনে নিই। বাটিকের কাজের জন্য বিভিন্ন অনুপাতে দুই ধরনের মোম এবং রজন ব্যবহার করা হয়। প্রুশিয়ান রং দিয়ে বাটিক করার সময় কাপড় বেশিক্ষণ পানিতে চুবিয়ে রাখব, তা না হলে ব্যবহৃত মোম ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই রজন কিছুটা বেশি মেশাব।

মোম তৈরির অনুপাত জেনে নিই- প্রুশিয়ান রঙের উপযোগী মোম

১। প্যারাফিন বা সাদা মোম আনুপাতিক হারে ৫০%

২। মৌচাকের মোম

-20%

৩। রজন

- 20%

পিতল বা এলুমিনিয়ামের পাত্রে চুলার খুব কম আঁচে মোম গলাতে হবে। রজন, মোম গলে ভালোভাবে মিশে গেলে চুলার আঁচ আরো কমিয়ে দিব। চুলার উপর রেখে নকশা করা কাপড়ে গোল কান্দাওয়ালা থালায় কাপড় লাগিয়ে মোম লাগাতে সুবিধা।

মোম লাগানো শেষ হলে প্রুশিয়ান বা ভ্যাট রঙে চুবিয়ে রং করতে হবে। অধিক রঙের কাপড় আলতোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে তারপর পরবর্তী মোম ও রং করব। এভাবে রং করা শেষ হলে কাপড় থেকে মোম তোলার জন্য একটা পাত্রে প্রয়োজনমতো গুঁড়ো সাবান দিয়ে কাপড়খানি সিদ্ধ করে মোম ছাড়িয়ে নেব। মোম ছাড়িয়ে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ইস্ত্রি করে নিলেই মোম বাটিক হয়ে গেল।

কাপড়ের রং তৈরি

কাপড়ের রং করার নিয়মগুলো জানা প্রয়োজন। মোটামুটি তিনটি পদ্ধতির রং বাটিকে ব্যবহার করা যায়।

১। ভেট রং

২। প্রুশিয়ান রং 

৩। ন্যাফথল রং

ন্যাফথল রং ব্যবহার একটু জটিল বিধায় শুধু ভেট রং ও প্রুশিয়ান রঙের পদ্ধতি জেনে নিই।

ভেট রং

একখানা শাড়ি বা সমপরিমাণ কাপড় রং করার জন্য নিচের পরিমাণে রং ও রাসায়নিক দ্রব্যের প্রয়োজন-

ভেট রং - ১ তোলা

হাইড্রোসালফাইট এন এফ-৪ তোলা

কস্টিক সোডা- ৪ তোলা

রং করার আগে কাপড় কমপক্ষে ৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখব। এরপর পানি ঝরিয়ে নেব। পরে কাপড়ের পরিমাণে পাত্রে পানি দিয়ে তা চুলায় বসাব। রং ও রাসায়নিক দ্রব্যগুলো নেড়েচেড়ে ভালো করে মেশাব। পানি গরম হলে রংসহ জিনিসগুলো ভালোভাবে মিশে গেলে ভেজা কাপড় এর মধ্যে ডুবিয়ে ১৫/২০ মিনিট সিদ্ধ করব। কাপড় (টাই এন্ড ডাই)বাঁধা অবস্থায় পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। ছায়ায় রেখে শুকানোর পর খুব ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ইসির করব। ভেট রং গরম করতে হয় বিধায় টাই এন্ড ডাই পদ্ধতির জন্য এটা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রুশিয়ান রং একটি শাড়ি বা সমপরিমাণ কাপড়ের জন্য নিচের পরিমাণ রং, লবণ ও সোডার প্রয়োজন

১। প্রুশিয়ান রং -১ তোলা ২। লবণ -৫ তোলা ৩ কাপড় কাচার সোডা -১ তোলা

রং করার আধা ঘণ্টা পূর্বে কাপড় ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখব পরে কাপড়ের পরিমাণে পানিতে পরিমিত ১ তোলা লবণ মেশাব। এনামেলের পাত্রে সামান্য গরম পানিতে ৩/৪ ফোঁটা এসিটিক এসিড দিয়ে প্রুশিয়ান রং মেশাব। রং ভালোভাবে মেশানো হয়ে গেলে লবণ মিশ্রিত পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে এবং তাতে কাপড় ডুবিয়ে ভালোভাবে নেড়েচেড়ে দেখব যে কাপড়ের সর্বত্র রং লেগেছে কিনা। ত্রিশ মিনিট পর আরেকটি বাটিতে সামান্য পরিমাণ পানি দিয়ে সোডাটুকু গুলে নিব এবং ডুবানো কাপড়ের রঙের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নেব। সোডা মেশানোর পর আরো ত্রিশ মিনিট ডুবিয়ে রাখব। এরপর কাপড় তুলে নিয়ে ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে চব্বিশ ঘণ্টা ছায়ায় শুকাব। ভালো করে শুকানোর পর সুতার বাধনগুলো খুলে নেব তারপর সাবান দিয়ে ধুয়ে ইস্ত্রি করব। যে বাটিক পদ্ধতিতে ঠাণ্ডা পানিতে রং করা হয় সে পদ্ধতি অনুসরণ করব।

পাঠ : ১৮

ব্লক

কাঠে নকশা এঁকে নুন দিয়ে খোদাই করে করে ব্লক ছাপার জন্য ব্লক তৈরি করা হয়।

পাঠ ১৯, ২০

কাঠে খোলাই শিল্প

নরম কাঠের তক্তার উপর অথবা প্লাইউড নকশা এঁকে নুরুন দিয়ে খোদাই করে এটি তৈরি করতে হয়। উপকরণ : হাতুড়ি, বাটালি / Carving বাটালি / Round বাটালি, প্লাস, করাত, চিকন বাটালি, শিরীষ কাগজ।

পাঠ : ২১ ও ২২

টেরাকোটা

পোড়ামাটির ফলকচিত্র বা টেরাকোটা

পোড়ামাটির ফলকচিত্র বাংলাদেশের আদি ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প এবং খুবই বিখ্যাত। মধ্যযুগে বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনাতে বিশেষ করে মন্দির, মসজিদ ইত্যাদির দেয়ালে এ ফলকচিত্র ব্যবহার করা হতো। পোড়ামাটির ফলকচিত্র বা Terracotta হচ্ছে মাটির পাটাতনের বা ফলকের সমান জমিনের উপর ছবি বা নকশা উঁচু হয়ে থাকে এমন রিলিফ ওয়ার্ক। এটা বানানোর জন্যে প্রথমে কাঁচা মাটি দিয়ে ফলকগুলো তৈরি করে তারপর পুড়িয়ে নেয়া হয়। তাই এগুলোকে বলে পোড়ামাটির ফলক। বগুড়ার মহাস্থান গড়ে তথা প্রাচীন পুণ্ড্রনগরীর প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম ফলকচিত্র পাওয়া গেছে। মহাস্থানগড়ের এবং দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরের ফলকচিত্রের বিষয়বস্তু নর-নারী ও দেবদেবী। অন্যদিকে পাহাড়পুর ও কুমিল্লার ময়নামতির ফলকগুলোতে তৎকালীন সমাজ ও নিসর্গের ছবি পাওয়া যায়, বাঘা মসজিদের বা টাঙ্গাইলের মদিনা মসজিদের ফলকচিত্রের বিষয়বস্তুও ফুল, লতা- পাতা ও জ্যামিতিক নকশা, কিন্তু বর্তমানে আধুনিক বিভিন্ন বিষয় ও আকৃতি নিয়ে টেরাকোটা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন অফিস ও বাসাবাড়ির আভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা ও ভবনের বাইরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এখন প্রচুর টেরাকোটা ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটির স্ল্যাব তৈরি করে তাতে মাটি কাটার বিভিন্ন আকৃতির টুলস দিয়ে খোদাই করে করে টেরাকোটা তৈরি করা হয়। মাটি দিয়ে তৈরি করে ছায়ায় রেখে কিছুদিন ভালোভাবে শুকাতে হবে। এরপর তুষের আগুনে পোড়াতে হবে। অথবা যাদের বাড়ির পাশে কুমার বাড়ি আছে তারা ঝুমার বাড়ির চুল্লিতেও পোড়াতে পারব। ছবি দেখে আমরা অতি সহজেই এগুলো বুঝতে ও করতে পারব।

পাঠ : ২৩ ও ২৪

ফেলনা জিনিস নিয়ে শিল্পকর্ম

বিভিন্ন হাড়ি পাতিল ভাঙা টুকরা দিয়ে ছবি তৈরি

উপকরণ: ফেবিক আঠা, বিভিন্ন হাড়ি পাতিল এর ভাঙা টুকরা ইত্যাদি ।

একটি প্লাইউড এর টুকরা নিই। 2B পেনসিল দিয়ে প্লাইউড এর উপর পছন্দমতো একটি ছবি আঁকি। এইবার প্লাইউড এ ফেবিক আঠা লাগাই। বিভিন্ন হাড়ি পাতিলের টুকরোগুলোর মধ্যেও ফেবিক আঠা লাগাব। এরপর টুকরাগুলো নকশা অনুসারে খুব সাবধানে বসাব। নকশার বাইরে যে অংশ আছে সেখানেও অন্য ধরনের টুকরোগুলো ফেবিক আঠা দিয়ে লাগাব। এভাবে অতি সহজেই ফেলনা জিনিস দিয়ে আমরা একটি মোজাইক ছবি তৈরি করতে পারি। (ছবি দেখে অনুশীলন করি)

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion

Promotion